www.agribarta.com:: কৃষকের চোখে বাংলাদেশ
শিরোনাম:

সমন্বিত কৃষি খামার থেকে মাসে আয় লাখ টাকা


 এগ্রিবার্তা ডেস্ক    ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার, ৩:৫৬   উদ্যোক্তা বিভাগ


 

আবদুল মান্নান জানান, খামারের পেছনে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিন কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছেন। মাছ ও গবাদিপশু থেকে বছরে খরচ বাদ দিয়ে তাঁর আয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। মাসে গড়ে আড়াই লাখ টাকা। খামারে সারা বছর বেতনভুক্ত ছয়জন শ্রমিক কাজ করেন। এ ছাড়া অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রতিদিন আরও চার-পাঁচজন শ্রমিক কাজ করেন।

সম্প্রতি খামার ঘুরে দেখা যায়, দুই পুকুরের মাঝামাঝিতে গরু রাখার তিনটি শেড। একটিতে বিদেশি জাতের গাভি ও বাছুর, আরেকটি শেডে ষাঁড় এবং অপর একটি শেডে দেশি জাতের গরু রাখা হয়েছে। ভেড়া ও ছাগল রাখার জন্য একটি পুকুরপাড়ে লম্বা আধা পাকা শেড করা হয়েছে। ইটের দেয়াল ও টিনের ছাউনি দেওয়া শেডটি মাটি থেকে উঁচু রাখার জন্য নিচে বাঁশের পাটাতন দেওয়া আছে। তবে দিনের বেলা ভেড়া ও ছাগলগুলো নেট দিয়ে ঘেরা একটি স্থানে রাখা হয়। ২০ শতক জায়গাজুড়ে একটি স্থানে বিদেশি ঘাস চাষ করা হয়েছে।

আবদুল মান্নান বলেন, তাঁর খামারে বর্তমানে দেশি জাতের গরু ছাড়াও বিদেশি সিন্ধি, ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল, ব্রাহমা জাতের গরু আছে। এসব গরুর মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি গাভি। যেগুলো থেকে প্রতিদিন ৬০–৭০ লিটার দুধ বিক্রি হয়। এ ছাড়া চারটি পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। মাছ চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে বছরে তাঁর পাঁচ লাখ টাকার মতো আয় হয়।

খামারি কীভাবে হলেন—প্রশ্নের জবাবে আবদুল মান্নান বলেন, এসএসসি পাস করার পর কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করার পর পড়াশোনা ছেড়ে দেন। ২০০০ সালে বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নওগাঁ পৌরসভার সুলতানপুর এলাকার একটি চালকল ভাড়া নিয়ে চালের ব্যবসা শুরু করেন। সেই ব্যবসায় আয়রোজগার ভালোই হচ্ছিল। ২০০৮ সালে নওগাঁ শহরের তাজের মোড়ে একটি ক্লাবের অনুষ্ঠানে যান। সেখানে অতিথি হিসেবে আসেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছিলেন, ‘নিজের যেটুকু জায়গাজমি ও সম্পদ আছে, তা ব্যবহার করে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করুন।’

এরপর তাঁর কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রামে নিজেদের চারটি পুকুরে ৮-৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মাছ চাষ শুরু করেন। ২০১৬ সালে মেহেরপুর থেকে ৪০টি ভেড়া তিন লাখ টাকায় কিনে এনে লালনপালন করা শুরু করেন। এরপর গরু মোটাতাজাকরণ ও উন্নত জাতের ছাগল পালন শুরু করেন। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

আবদুল মান্নান বলেন, ‘খামারটি আরও বড় করার ইচ্ছা আছে। ঋণের আবেদন করেছিলাম দুই বছর আগে। সেই ঋণ এখনো ছাড় হয়নি। ঋণ ছাড় হলে এখানে আরও বড় কিছু করার স্বপ্ন আছে।’

মালশন গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ হোসেন বলেন, আবদুল মান্নান যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানে সফল হয়েছেন। সমন্বিত কৃষি খামার করে এলাকার যুবকদের চোখ খুলে দিয়েছেন। বিদেশি উন্নত জাতের গরু ও ভেড়া পালন করে সফল হয়েছেন। এখন এলাকার প্রায় সবাই তাঁর কাছ থেকে গরু ও ভেড়া পালন করা শিখছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন বলেন, প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে উদ্যোক্তা আবদুল মান্নানকে নানাভাবে পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভেড়া পালনে তাঁকে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বসে না থেকে বেকার যুবকেরা তাঁর মতো উদ্যোক্তা হতে পারেন।




  এ বিভাগের অন্যান্য