কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন
কাজী পেয়ারার স্বাদ কীভাবে আরো বাড়ানো যায় সে বিষয়ে বারির বিজ্ঞানীদের গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মতিয়া চৌধুরী এমপি। একই সঙ্গে জাতীয় ফল কাঁঠালের আকার ছোট করে ফলন বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের গবেষণা চালানোর পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব পরামর্শ দেন মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাঁঠালকে জাতীয় ফল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। বর্তমানে দেশে বিশাল আকারের সব কাঁঠাল উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু পরিবারগুলোয় এখন সদস্য সংখ্যা কমে গিয়েছে। ফলে কাঁঠালের অপচয় হচ্ছে। তাই এর আকার ছোট করে কীভাবে ফলন আরো বাড়ানো যায় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি দিতে হবে।
সংসদীয় কমিটি মতিয়া চৌধুরীর পরামর্শ দুটিকে বৈঠকের সুপারিশ হিসেবে উল্লেখ করে। সেই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির বৈঠকে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। যেখানে কাজী পেয়ারার স্বাদ আর কাঁঠালের আকার ছোট করার বিষয় নিয়ে সর্বশেষ বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরা হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ১৯৮৪ সালে উদ্ভাবিত কাজী পেয়ারা উচ্চফলনশীল পেয়ারার প্রথম ও জনপ্রিয় জাত। পরে ১৯৯৬ সালে নরম বীজযুক্ত, অধিক কচকচে এবং সারা বছর ফল দিতে সক্ষম বারি পেয়ারা-২ নামে আরেকটি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়। এরপর ২০১৭ সালে উদ্ভাবন করা হয় বীজবিহীন বারি পেয়ারা-৪ জাত। আরো সুস্বাদু, কচকচে, নরম ও অল্প বীজযুক্ত পেয়ারার উন্নত জাত উদ্ভাবন করার জন্য দেশী পেয়ারার সঙ্গে বারি উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে সংকরায়ন কার্যক্রম চলমান। এ সংকরায়িত পেয়ারগুলো থেকে এক বা একাধিক ভালোমানের পেয়ারার জাত অবমুক্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বারি এ পর্যন্ত চারটি সুস্বাদু, পুষ্টিসমৃদ্ধ, উচ্চফলনশীল কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন করেছে। এ জাতগুলোর মধ্যে বারি কাঁঠাল-৩ এবং বারি কাঁঠাল-৪ জাত দুটির ফলের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট। একেকটি কাঁঠালের ওজন পাঁচ-ছয় কেজি হয়ে থাকে। এছাড়া পরীক্ষায় বেশকিছু সম্ভাবনাময় ছোট আকারের জার্মপ্লাজম পাওয়া গিয়েছে। যেগুলোর ওজন হতে পারে দেড় কেজি থেকে আড়াই কেজি। দেশী ও বিদেশী কাঁঠালের সঙ্গে বারি উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে সংকরায়ন শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এসব সংকরায়ন থেকে এক বা একাধিক ভালোমানের ও কাঙ্ক্ষিত ছোট আকারের কাঁঠাল উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত অর্থবছরে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাঠপর্যায়ে দায়িত্বরত ৪২০ কর্মকর্তা এবং মাঠ পর্যায়ে ৬০ হাজার ৬০ জন কৃষককে ফল উৎপাদন ও পুষ্টি উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বারির উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রগুলো থেকেও প্রতি বছর কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে। কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় আর পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম। ২০০৮-০৯ সালে দেশে ফলের উৎপাদন ছিল প্রায় এক কোটি টন, আর বর্তমানে ফল উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টন। গত ১২ বছরে ফলের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ২২ শতাংশ। এ কারণে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু ফল গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। ২০০৬ সালে মাথাপিছু ফল গ্রহণের হার ছিল ৫৫ গ্রাম যা বেড়ে এখন হয়েছে ৮৫ গ্রাম।